ইহরাম কি? বা ইহরাম কাকে বলে? ইহরাম সম্বন্ধে কিছু জরুরী মাসআ’লা।

ইহরাম সম্বন্ধে কিছু জরুরী মাসআ’লা

ইহরাম কি? বা ইহরাম কাকে বলে?

১। ইহরাম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিষেধ করা, নিষিদ্ধ করা, অর্থাৎ কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে নিজেকে প্রবেশ করানো। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্ব বা উমরাহ্ করার কার্যাবলীতে প্রবেশ করার নামই ইহরাম। আল্লহর ভালবাসায়, তাঁর অতিথি হয়ে পথ চলার প্রথম কাজই হলো ইহরাম। 

ইহরাম অবস্থায় হাজীদের জন্য অনেকগুলো বৈধ কাজ ও আকাংখা সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। হজ্ব বা উমরাহ্ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি মীকাত থেকে অথবা মীকাত অতিক্রম করার পূর্বেই হজ্ব বা উমরাহর ‘নিয়ত’ করে ও ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করে হজ্ব বা উমরাহর কার্যক্রম শুরু করাকে ইহরাম বলে। ইহরাম বাঁধা ব্যক্তিকে মুহরিম বলে।

২। যদিও হজ্ব বা উমরাহর প্রথম ফরজ আ’মলই হলো ইহরাম বাঁধা। কিন্তু হাজীগণ ইহরামের ব্যাপারেই সবচেয়ে বেশী অজ্ঞ/গাফেল, ফলে তাঁরা ইহরাম অবস্থায় অনেক ভুল-ভ্রান্তি করে থাকেন। যেহেতু ইহরাম অবস্থায় কোনো ভুল করলে প্রতিটি ভুলের জন্য ছোট-বড় কাফফারা (জরিমানা), দম বা সদাকাহ্ দিতে হয়, তাই এ ব্যাপারে সকল খুঁটিনাটি মাসআলা জানা ও মানা সকলের জন্যই অতি জরুরী। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।

ইহরামের ফরজ ২ টি -৩

যথা-

(ক) হজ্ব বা উমরাহর নিয়ত করা।

(খ) তালবিয়াহ পাঠ করা (বুখারী ও মুসলিম)।

ইহরামের ওয়াজিব ২টি - ৪

যথা-

(ক) মীকাত অতিক্রম করার পূর্বে বা মীকাতে ইহরাম বাঁধা।

(খ) ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা।

ইহরামের সুন্নাত ৬ টি - ৫

যথা-

(ক) শরীরের অবাঞ্চিত লোম পরিষ্কার করা।

(খ) হাতে-পায়ের নখ কাটা।

(গ) মেছওয়াক করে উজু/গোসল করা।

(ঘ) শরীরে আতর ব্যবহার করা (পুরুষদের জন্য)।

(ঙ) ইহরামের পোশাক পরা।

(চ) দু রাকা’আত নামাজ পড়া।

ইহরাম বাঁধার সুন্নাত তরীকা

৬। ইহরাম বাঁধার সুন্নাত তরীকাঃ মীকাত অতিক্রম করার পূর্বে বা মীকাতে নিম্নলিখত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করলে ইহরাম বাঁধা হয়:-

ক। প্রয়োজনীয় ক্ষৌর কাজ করা (বগল ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করা) সুন্নাত।

খ। হাত-পায়ের নখ কাটা সুন্নাত।

গ। উজু করা/গোসল করা সুন্নাত।

ঘ। পুরুষের জন্য কাপড়ে নয় বরং শরীরে সুগন্ধি অর্থাৎ আতর ব্যবহার করা সুন্নাত (কোনো প্রকার সেন্ট/পারফিউম/বডি লোশন ইত্যাদি নয়)। মহিলারা কোনো প্রকার সেন্ট বা আতর ব্যবহার করবেন না।

ঙ। পুরুষের জন্য সেলাই যুক্ত কাপড় খুলে সেলাই বিহীন দু টুকরা কাপড় পরা (একটি লুঙ্গির মতো করে, অন্যটি গায়ের চাদরের মতো করে) এবং মহিলাদের জন্য যে কোনো মার্জিত কাপড় পরা সুন্নাত।

চ। ইহরামের কাপড় পরে, দুই রাকাআ’ত সুন্নাত নামাজ পড়া (পুরুষেরা টুপি পরে এ নামাজ পড়তে পারবেন, তবে নামাজ শেষে টুপি খুলে ফেলতে হবে)। নবী (সঃ) বিদায় হজ্বের সময় যুল্হুলায়ফা মীকাতে ২ রাকাআ’ত নামাজ পড়েছেন। ( হেদায়া অন নেহায়া: পৃষ্ঠা ২৩৬, শামী: ৩য় খন্ড, কিতাবুল হজ্ব: পৃষ্ঠা ৪৮৮)

ছ। নামাজ শেষ করে জায়নামাযে বসেই অথবা মীকাত অতিক্রম করার পূর্বেই নিজ বাড়ীতে/যানবাহনে/হাজী ক্যাম্পে/বিমানবন্দরে/বিমানের ভেতরে শুধু উমরাহ্, শুধু হজ্ব অথবা উমরাহ্ ও হ্জ্ব একত্রে পালন করার জন্য নিয়ত করা ফরজ।

জ। নিয়ত করার পর একবার তালবিয়াহ পাঠ করা ফরজ- ৩বার পাঠ করা সুন্নাত (পুরুষেরা উচ্চস্বরে এবং মহিলারা নিচুস্বরে)। অনুচ্ছেদ ‘ক’ থেকে ‘জ’ তে উল্লেখিত কাজগুলো যথানিয়মে সম্পন্ন করলে একজন ব্যক্তি উমরাহ্ বা হজ্ব করার জন্য ইহরাম বাঁধলেন বা ‘ইহরাম অবস্থায়’ হলেন। এখন থেকে তাঁর উপর দুনিয়াবী অনেক হালাল কাজ ইহরাম অবস্থায় থাকার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ইহরাম অবস্থায় তাঁকে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

ইহরাম অবস্থায় তালবিয়াহ্ পড়ার বিধান

৬। ইহরাম অবস্থায় তালবিয়াহ্ পড়ার বিধানঃ

ক। ইহরাম বাঁধা ছাড়া তালবিয়াহ্ পড়ার নিয়ম নেই। তবে প্রশিক্ষণের জন্য পড়া জায়েয। ইহরাম বাঁধার পর থেকে বেশী বেশী তালবিয়াহ্ পড়াই সর্বোত্তম আ’মল। যখনই তালবিয়াহ্ পড়বেন- ৩ বার করে পড়বেন।

খ। পুরুষদের জন্য উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পড়া মুস্তাহাব। তবে চিৎকার করে নয়। উচ্চস্বরে পড়তে গিয়ে কারো নামাজের, কুরআন তেলাওয়াতের, ঘুমন্ত/অসুস্থ ব্যক্তির বিশ্রামে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। মহিলারা সর্বাবস্থায় আস্তে আস্তে তালবিয়াহ্ পাঠ করবেন, তবে যেন নিজের কানে শুনতে পান।

গ। উমরাহ্ করার জন্য ইহরাম বাঁধার পর থেকে তওয়াফ শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত বেশী বেশী তালবিয়াহ্ পড়তে হবে এবং তওয়াফের নিয়ত করার পূর্বেই তালবিয়াহ্ পড়া বন্ধ করতে হবে।

ঘ। হজ্ব করার জন্য ইহরাম বাঁধার পর থেকে শুরু করে ১০ তারিখে বড় জামারাতে পাথর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত বেশী বেশী তালবিয়াহ্ পড়তে হবে এবং পাথর নিক্ষেপের পূর্বে তালবিয়াহ্ পড়া বন্ধ করতে হবে। তবে কেউ যদি ১০ যিলহজ্ব তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করতে না পারে, তাহলে তাকে সূর্যাস্তের পর আর তালবিয়াহ্ পড়তে হবে না।

ঙ। নামাজের মধ্যে তালবিয়াহ্ পড়া নিষেধ।

চ। সফরের সময় অধিক পরিমাণে তালবিয়াহ্ পড়া উত্তম। বিশেষত ফরজ নামাজের পর, সকাল-সন্ধ্যায়, ঘুমানোর সময়, ঘুম থেকে জেগে, ঘরের বাইরে যাবার সময়, ঘরে প্রবেশের সময়, গাড়ীতে উঠার/নামার সময়, উপরে উঠার/নিচে নামার সময় তালবিয়াহ্ পড়া মুস্তাহাব (শামী, ২ ঃ ৪৯১, আলমগীরী, ১ঃ ২২৩)।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url