হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর জামানায় হজ্বের প্রবর্তন

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর জামানায় হজ্বের প্রবর্তনঃ

বিশ্ব মানবের জন্য হজ্ব ফরজ হওয়ার সূচনায় আল্লহর নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর নাম বিশেষভাবে জড়িত। যদিও এ ইবাদাতটি (শুধু তওয়াফের আ’মল) সীমিতভাবে সূচিত হয় সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ)-এর জামানাতেই।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লহ্তাআ’লার নির্দেশে বাইতুল্লাহ শরীফ যিয়ারত ও হজ্বের ঘোষণা করার পর (সূরাঃ হাজ্ব, আয়াতঃ ২৭) জিবরাঈল (আঃ)

হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে হজ্ব পালনের ধারাবাহিক নিয়ম কানুন, যথারুক্ণ, আরকান ইত্যাদি ভালভাবে দেখিয়ে, বুঝিয়ে শিক্ষা দিয়ে যান।

যতদিন ইব্রাহীম (আঃ) জীবিত ছিলেন, ততদিন তিনি এ শিক্ষানুযায়ী হজ্ব কার্য সমাধা করেছেন এবং তাঁর উম্মতদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর ওফাতের পরও বহু বছর যাবৎ ঐ শিক্ষা তথা সুন্নাতে ইব্রাহীমী তরীকায় হজ্বব্রত যথা নিয়মে পালিত হয়েছে। পরবর্তীতে আরো অনেক পয়গম্বরের আবির্ভাব হয়েছে। তাঁরা এবং তাঁদের উম্মতরাও যথা নিয়মে বাইতুল্লাহ শরীফ যিয়ারত করেছেন/তওয়াফ করেছেন।

২০। হযরত মূসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর আবির্ভাবের বহু বছর পর আরব এলাকায় ইহুদী ও নাসারাদের প্রভাব প্রবল আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবকে বিকৃত করে নানা প্রকার কুসংস্কারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে মক্কা এলাকাও ইহুদীনাসারাদের করতলগত হয়। তারা ক্রমান্বয়ে শরীয়ত বিরোধী কার্য কলাপে লিপ্ত হয়ে মুশরিক-কাফিরদের অনুসারী হয়ে যায়। ইসলাম ধর্মের নাম নিশানা মুছে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালায়। এভাবে জাহিলিয়াত বা অন্ধকার যুগ ফিরে আসে। মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, চুরি, ডাকাতি, খুন-খারাবীতে দেশ ডুবে যায়। 

ক্রমান্বয়ে মক্কা শরীফও কাফির মুশরিক-ইহুদী-নাসারাতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কা’বা শরীফ বোতখানায় (যে স্থানে বহু মূর্তি একত্রে রেখে পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়) পরিণত হয়। লাত, উয্যা, মান্নাত নাম বিশিষ্ট পাথর পূজা, মূর্তিপূজা চলতে থাকে, চারদিক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। 

আল্লহতাআ’লা যম্ যম্ কূপকে বিলুপ্ত করে দেন, ফলে সম্পূর্ণ এলাকায় পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) প্রবর্তিত হজ্বের ক্রিয়া কর্মে নানান মনগড়া প্রথা প্রচলিত হয়ে এক অসামাজিক খেল-তামাশার মেলায় পরিণত হয়। এমনকি সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় কা’বা শরীফ তওয়াফের প্রথা চালু হয়ে যায়। 

এভাবে শত শত বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লহর খাস রহমতে সর্বশেষ পয়গম্বর মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আবির্ভাবে পুনরায় বিলুপ্ত প্রাপ্ত ইসলামী শরীয়ত কায়েম হয়। যাবতীয় অনাচার ও কুসংস্কারের মূলোৎপাটন হয়ে আসল শরীয়তসম্মত ইবাদাত প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইন্শাআল্লহ কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। 

তাছাড়া মক্কা বিজয়ের পর থেকে আল্লহর পক্ষ থেকেও ইহুদী-নাসারাসহ সকল অমুসলিমদের জন্য মক্কায় প্রবেশ চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়, যা কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, ইন্শাআল্লহ্ (সূরাঃ তাওবা, আয়াতঃ ২৮)। এ ভাবেই হজ্ব ও উমরাহ্র সকল কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url