কখন হজ্ব করবেন? এবং কিভাবে হজ্ব করতে যাবেন?

কখন হজ্ব করবেন ? 

কোনো মুসলিম নর-নারী বালেগ হওয়ার পর যখনই আল্লহ্ তাকে আর্থিক সামর্থ্য এবং শারীরিক সুস্থতা দান করেন, তখনই ঐ ব্যক্তির উপর হজ্ব করা ফরজ হয়ে যায় এবং ঐ ব্যক্তির জন্য কোনো কালবিলম্ব না করে এবং কোনো অজুহাত না দেখিয়ে হজ্ব পালন করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কোনো ব্যক্তির উপর নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদি ফরজ হওয়ার পর তা আদায় করার ব্যাপারে যেমন কোনো ওজর আপত্তি চলে না, ঠিক তেমনি ভাবে হজ্ব ফরজ হওয়ার পর তা পালন না করার জন্য কোনো অজুহাত চলবে না। যদিও আমাদের দেশের লোকেরা নানান অজুহাত দেখিয়ে হজ্ব পালন করা বিলম্বিত করতে থাকেন, ফলে অনেকের ভাগ্যে হজ্জ নসীবই হয় না। 

আমরা অনেকেই ছেলেমেয়ের বিয়ে দেয়া, বাড়ী-ঘর তৈরি করা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার করা, জমি ক্রয়-বিক্রয় করা, ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া শেষ করা, ছোট ছেলে-মেয়েদের বড় হওয়া, বয়সের দিক থেকে আরো একটু মুরব্বী/বৃদ্ধ হওয়া ইত্যাদির দোহাই দেখিয়ে হজ্ব পালন করা থেকে বিরত থাকি অথবা বিলম্ব করতে থাকি। মোট কথা, আমরা সাধারণত দুনিয়াবী সব দায়-দায়িত্ব শেষ করে বৃদ্ধ বয়সে হজ্ব করতে যাই। 

এ ধারণা অবশ্যই ঠিক নয়, বরং এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। বর্তমানে অবশ্য এ ধ্যান-ধারণার কিছুটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইদানীং দেখা যায়, বেশ কিছু সংখ্যক ভাই-বোনেরা তরুণ বয়সে/মধ্যম বয়সেই হজ্ব করতে যান। আল্লহ্ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দিন।

৭। হজ্বর বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ যিল্হজ্ব মাসের ৮ থেকে ১২/১৩ তারিখের মধ্যেই সম্পাদন করতে হয়। তাই এ সময়ে হজ্ব না করলে এক বছরের জন্য পিছিয়ে যেতে হয়। আর এই এক বছরের মধ্যে এক ব্যক্তির জীবনে কত রকমের বিপর্যয় আসতে পারে, যেমন আর্থিক সামর্থ্য না থাকতে পারে, শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে, পারিবারিক সংকট দেখা দিতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। সুতরাং যার উপর যে বছর হজ্ব ফরজ হয়, সে বছরই হজ্ব আদায় করা তার জন্য অপরিহার্য। তাই অযৌক্তিক কোনো অজুহাত দেখিয়ে হজ্ব পালনে কারো বিলম্ব/গাফিলতি করা উচিত নয়।

কিভাবে হজ্ব করতে যাবেন? 

সরকারি ব্যবস্থায় অথবা বেসরকারি ব্যবস্থায় হজ্ব করতে যেতে পারেনঃ

ক। সরকারি ব্যবস্থায়ঃ অর্থাৎ ব্যালটী হিসাবে হজ্ব করতে গেলে খরচ কিছু কম লাগে, তবে বিভিন্ন অব্যবস্থার কারণে কষ্ট বেশী হয়। এ কারণে আমাদের দেশের মোট হাজীর ৫%-এর কম সংখ্যক লোক সরকারি ব্যবস্থায় হজ্ব করতে যান। বর্তমানে সার্বিকভাবে অবস্থার অনেক উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

খ। বেসরকারি ব্যবস্থায়ঃ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত লাইসেন্স-প্রাপ্ত ট্রাভেল এজেন্সীর মাধ্যমে হজ্ব পালন করতে যাওয়া যায়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্সীগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি বা হজ্ব কাফেলার মাধ্যমে হাজীদেরকে হজ্বে নিয়ে যান। এতে খরচ কিছু বেশী হলেও বিভিন্ন এজেন্সী/কাফেলা প্রতিযোগিতামূলকভাবে ভাল ব্যবস্থা করে থাকেন। এজন্য আমাদের দেশের ৯৫ ভাগ হাজী বেসরকারী ব্যবস্থাতেই হজ্ব করতে যান। 

এ ব্যবস্থায় হজ্ব সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকা-খাওয়া-যাতায়াত ইত্যাদির সকল ঝুঁকি/ঝামেলা এজেন্সীর/কাফেলার কর্তৃপক্ষরাই করে থাকেন। তাতে হাজী সাহেবদের অনেক আরাম হয় এবং খাওয়া, থাকা এবং যানবাহনের ঝামেলা না থাকায় একাগ্রতার সাথে বেশী বেশী এবাদাত-বন্দেগী করতে পারে। 

অবশ্য কোনো কোনো অদক্ষ ও অসৎ এজেন্সী দ্বারা হাজীগণ প্রতারিত হন এবং চরম কষ্টও পেয়ে থাকেন এবং অনেক রকম ধোঁকাও খেয়ে থাকেন। প্রতি বছর কিছু সংখ্যক হাজী প্রতারিত হয়ে হজ্বে যেতেই পারেন না। তাই অত্যন্ত সাবধানতা/সতর্কতার সাথে হজ্ব এজেন্সী/কাফেলার সেবা দেয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে এজেন্সী নির্বাচন করতে হবে। উপযুক্ত এবং অভিজ্ঞ আলেম ব্যক্তি কর্তৃক আয়োজিত কাফেলার সাথে যেতে পারলে হজ্ব-পালনের ব্যাপারে অনেক সুবিধা হয়। হাজীদেরকে তালীম দেয়া, হজ্ব পালনে সাহায্য করার লক্ষ্যে কোনো কোনো এজেন্সী অভিজ্ঞ আলেম নিয়োগ করে থাকেন। বর্তমানে হজ্ব এজেন্সীগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। তাই আপনার পছন্দমতো ক্যাটাগরীতে হজ্ব করতে যেতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url