মক্কা ও মদীনা শরীফে উল্লেখযোগ্য নিদর্শনাবলী/ঐতিহাসিক স্থান এবং সোনার মদীনা শরীফে কখন যাবেন?

মক্কা শরীফে উল্লেখযোগ্য নিদর্শনাবলীঃ

ক। মাসজিদুল হারামের সীমানার মধ্যে নিদর্শনাবলীঃ

(১) বাইতুল্লাহ অর্থাৎ আল্লহর ঘর (কালো গিলাফে ঢাকা কা’বা ঘর)।

(২) কা’বা ঘরের দক্ষিণ পূর্ব কোণের দেওয়ালে বসানো হাজরে আস্ওয়াদ (কালো বেহেশতী পাথর)।

(৩) হাতীম (কা’বা ঘরের উত্তর দিকে নিচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা কা’বা ঘরের ছাদ বিহীন অংশ)।

(৪) কা’বা ঘরের উত্তর-পূর্ব দিকে আনুমানিক ১৪ মিটার দূরত্বে মাকামে ইব্রাহীম (হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর পদ চিহ্নসহ পাথর)।

(৫) যম্ যম্ কূপ (তওয়াফ করার সুবিধার্থে যম্ যম্ কূপের উপর ছাদ তৈরি করে দেয়ার কারণে এখন আর কূপটি দেখা যায় না)।

(৬) সাফা ও মারওয়া নামে দুটি পাহাড়।

খ। মক্কা শহরের ভেতরে / বাইরে অবস্থিত নিদর্শনাবলী

(১) নবী করীম (সঃ) এর জন্ম স্থান।

(২) জান্নাতুল মা’লা (মক্কা শরীফের কবরস্থান)।

(৩) মারওয়া পাহাড়ের অনতি দূরে পূর্ব দিকে ইসলামের প্রধান শত্রু আবু জেহেলের বাড়ীর স্থান (বর্তমানে কা’বা শরীফের চত্বরে সবচেয়ে বড় টয়লেট)।

(৪) জাবালে নূর (প্রায় ২৫০০ ফুট উঁচুতে হেরা গুহা-যে গুহায় হুজুর (সঃ) নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন)।

(৫) গারে সওর (হিজরতের সময় হুজুর (সঃ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ) যে পাহাড়ের গুহায় (প্রায় ৩০০০ ফুট উঁচুতে) আশ্রয় নিয়েছিলেন)।

(৬) মীনা ময়দান।

(৭) মুযদালিফা ময়দান।

(৮) আরাফাহ ময়দান (হজ্বের প্রধান মিলন স্থান এবং গুনাহ মাফের স্থান)।

(৯) মীনাতে মসজিদে খায়েফ ও আরাফাত ময়দানের এক প্রান্তে মসজিদে নামিরাহ। (হজ্বের মৌসুম ছাড়া এ মাসজিদ দু’টো বন্ধ থাকে)।

(১০) আরাফাতের মাঠে জাবালে রহমত (যে পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে হুজুর (সঃ) ১০ম হিজরী সালে বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন)।

(১১) মীনাতে কুরবানি করার স্থান।

(১২) মীনাতে ছোট, মেঝো ও বড় ৩টি জামারাহ্। যে স্থানগুলোতে

হাজীগণকে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। (যে স্থান গুলোতে ইবলীস শয়তান হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে ধোঁকা দিয়েছিল)

মদীনা শরীফে নিদর্শনাবলী/ঐতিহাসিক স্থান

(১) মাসজিদুন নববীর ভেতরে:

(ক) রওযা শরীফ (খ) রিয়াদুল জান্নাহ্ (গ) ৮টি ঐতিহাসিক

খাম্বা (ঘ) আসহাবে সুফ্ফা (ঙ) নবী (সঃ) এর মেহরাব।

(২) জান্নাতুল বাকী কবরস্থান। (৩) বদরের যুদ্ধ প্রান্তর।

(৪) জাবালে উহুদ/উহুদের যুদ্ধ প্রান্তর। (৫) খন্দকের যুদ্ধ প্রান্তর।

(৬) মাসজিদে কুবা। (৭) মাসজিদে কিব্লাতাইন।

(৮) মাসজিদে যুলহুলাইফা।


বিঃ দ্রঃ

(১) হজ্বে রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই উপরোল্লিখিত ঐতিহাসিক / দর্শনীয় স্থানগুলোর বৈশিষ্ট্য / ইতিহাস সম্বন্ধে যদি জেনে যান, তাহলে যখন ঐ স্থানগুলো দেখবেন, তখন খুব ভাল লাগবে এবং গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবেন।

(২) আল্লহ্র নিদর্শন দেখা এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনও আল্লহর জিকিরের একটি পদ্ধতি। ধোঁয়া দেখলে যেভাবে তার পেছনে আগুনের অস্তিত্ব স্মরণে আসে, তেমনি আল্লহর নিদর্শন দেখলে আল্লহ্কে স্মরণ করা হয়। সুতরাং আল্লহর নিদর্শন দেখা নেক আ’মলে গণ্য।

(৩) মক্কা-মদীনার যে সব নিদর্শন/ঐতিহাসিক স্থানগুলোর কথা উল্লেখ করলাম, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ছবি মদীনা পাবলিকেশন্স এর ‘সীরাত এ্যালবামে’ পাবেন। এ এ্যালবামটি বাংলাবাজার ইসলাম টাওয়ারে, বাইতুল মুর্কারমের/কাঁটাবনের বই-এর দোকানে পাবেন। এটি একটি বিরল ছবি ও তথ্যবহুল এ্যালবাম, যা অন্য কোনো বই-পুস্তকে পাবেন না। ‘পবিত্র যমযম’ - মদীনা পাবলিকেশন্স এর আরো একটি বই/এ্যালবাম। এটিও কিনে পড়বেন, অনেক ফায়দা হবে।

(৪) কা’বা শরীফ, হাজরে আস্ওয়াদ, হাতীম, মাকামে ইব্রাহীম এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয় উমরাহ্ ও হজ্বের কার্যক্রমের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এ ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ইতিহাস/গুরুত্ব জানা অতীব জরুরী। অতএব, উল্লেখিত বই পুস্তক পড়ে এবং এ্যালবাম দেখে সব কিছু জেনে হজ্ব করতে যাবেন।

সোনার মদীনা শরীফে কখন যাবেন ?

সোনার মদীনায় আমাদের প্রিয় নবী করীম (সঃ) এর মাসজিদুন নববী ও তাঁর রওজাপাক যিয়ারত করা যদিও হজ্বের কোনো অংশ নয়, তবুও এ কাজ অতি জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, এ মহান কাজটি কখন করবেন? হজ্বের আগে, না পরে? এ ব্যাপারে ধরাবাধা কোনো নিয়ম নেই। তবে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের জন্য সৌদী সরকার সকল হাজীদেরকে দু’ভাগে অর্থাৎ হজ্বের আগে ও পরে মদীনা শরীফ পাঠান। যে সকল হাজীগণ হজ্বের ৩৫/৪০ দিন পূর্বে মক্কা শরীফ পৌঁছেন, তাঁদেরকে হজ্বের পূর্বেই ১০ দিনের জন্য (যেতে ১ দিন, আসতে ১ দিন, মাঝখানে ৮দিনে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য) মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেন। 

যাঁরা হজ্বের অল্প দিন পূর্বে মক্কা শরীফে পৌঁছেন, তাঁদেরকে হজ্বের পরে মদীনা শরীফ পাঠান এবং মদীনা শরীফ থেকে পুনরায় আর মক্কা শরীফে আসতে দেয়া হয় না। সেখান থেকেই সরাসরি তাঁদেরকে নিজ নিজ দেশে ফিরতে হয়। সুতরাং আপনি হজ্বের ৩৫/৪০ দিন পূর্বে মক্কায় পৌঁছলে হজ্বের আগেই মদীনা শরীফ যেতে পারবেন। 

যদি কেউ প্রথমে সরাসরি মদীনা শরীফে যেতে চান, তাহলে হজ্ব এজেন্সীর সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অনেক কারণে হজ্ব এজেন্সিরাও আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী সফরের শিডিউল করতে পারেন না। অতএব সবকিছুর জন্য আল্লহর উপর ভরসা করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url