হজ্ব কবুল হওয়ার শর্তসমূহ এবং পড়াশুনার জন্য হজ্বের বইয়ের একটি তালিকা

হজ্ব কবুল হওয়ার শর্তসমূহঃ

হজ্ব করার ফজীলত যেমন অনেক বেশী, তাই হজ্ব কবুল হওয়ার শর্তগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন। নিম্নে প্রধান শর্তগুলো উল্লেখ করলামঃ

ক। তাওবা করাঃ আপনি যখন হজ্ব ও উমরাহ্ করার নিয়ত করলেন, তখন সর্বপ্রথমেই আপনার অতীতের সকল গুনাহের ব্যাপারে তাওবা করে পাক পবিত্র হতে হবে। অতীতের সকল গুনাহ্ স্মরণ করে একাগ্রতার সাথে ‘তাওবাতুন নাছুহা’ করতে হবে এবং দৃঢ়চিত্তে আল্লহর নিকট অঙ্গীকার করতে হবে যে, জীবনে আর কখনো গুনাহ্- এর কাজ করবেন না (তাওবা করার সঠিক নিয়ম এবং শর্ত সম্বন্ধে বই পড়ে অথবা আলেম ব্যক্তির নিকট থেকে জেনে নেবেন)।

খ। হালাল টাকাঃ হজ্ব ও উমরাহর জন্য অবশ্যই হালাল উপার্জনের টাকা ব্যয় করতে হবে। আল্লহ্ পূত-পবিত্র, তাই তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু কবুল করেন না। হজ্ব কবুল হওয়ার এটা একটা প্রধান শর্ত। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। সুতরাং হালাল টাকা দিয়ে হজ্ব/উমরাহ্ করবেন।

গ। মা-বাবাকে খুশি করে হজ্বে যাওয়াঃ আল্লহ্ তাঁর এবাদতের পরেই মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য সুস্পষ্ট হুকুম দিয়েছেন (সূরা বনী-ইসরাঈল, আয়াত নং-২৩, সূরা আন-নিসা, আয়াত নং ৩৬, সূরা লুকমান, আয়াত নং ১৪,১৫)। সুতরাং মা-বাবা বেঁচে থাকলে তাঁদেরকে রাজী খুশী করে হজ্ব করতে যেতে হবে। এ বিষয়ে বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী হাদীস গ্রন্থগুলোতে বহু সহীহ্ হাদীস বিদ্যমান।

ঘ। ঋণ পরিশোধ করে যাওয়াঃ ঋণ থাকলে পরিশোধ করে অথবা পাওনাদার ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের সাথে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে ব্যবস্থা করে এবং পাওনাদার ব্যক্তির নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এবং ক্ষমা চেয়ে হজ্বে যেতে হবে।

ঙ। হক আদায় করে যাওয়াঃ হকদারদের হক আদায় করে হজ্ব করতে যেতে হবে।

চ। হিংসা-অহংকার ত্যাগ করে যাওয়াঃ একজন হাজীকে সকল প্রকার আত্মগর্ব, বংশ গৌরব, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্ষমতার / টাকার অহংকার ইত্যাদি বিষয়কে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে হজ্বে যেতে হবে।

ছ। ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে যাওয়াঃ কোনো আত্মীয় স্বজনের বা পড়শী বা অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে ঝগড়া বিবাদ থাকলে, তা মিটিয়ে হজ্বে রওয়ানা হতে হবে।

জ। এছাড়াও হজ্ব কবুল হওয়ার জন্য আরো বহু শর্ত আছে, তবে উপরের শর্তগুলোই প্রধান। এক কথায় ‘মক্ববুল হজ্ব’ নসীব হওয়া সহজ কথা নয়। সুতরাং সকলকেই নিজের হিসাব-কিতাব ঠিক করে এবং মনমানসিকতা পরিশুদ্ধ করে হজ্ব করতে হবে। তা হলেই শুধু ‘মক্ববুল হজ্ব’ আশা করা যেতে পারে।

পড়াশুনার জন্য হজ্বের বইয়ের একটি তালিকাঃ

আমি যে নির্দেশিকাটি লিখলাম-এটা শুধু হাজীদের হজ্বের প্রধান প্রধান নিয়ম কানুনগুলো মনে রাখার জন্য। বিস্তারিত প্রস্তুতির জন্য প্রত্যেক হাজী সাহেবকে একাধিক বই পড়া একান্ত প্রয়োজন। তাই এখানে আমি কতগুলো বই এর নাম উল্লেখ করলাম, যে বইগুলো পড়লে হজ্ব, উমরাহ্ ও যিয়ারত সম্বদ্ধে আরো পরিষ্কার ও যথাযথ জ্ঞান পাওয়া যাবে, যা অর্জন করা অতীব প্রয়োজনঃ-

(১) হজ্ব ও মাসায়েল - এমদাদিয়া লাইব্রেরী

(২) তালিমুল হজ্জ - মাওলানা মহিউদ্দীন খান

(৩) আহকামে হজ্জ - মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন

(৪) তোহ্ফায়ে হজ্ব - মুফতী মোঃ ওবায়দুল্লাহ

(৫) সীরাত এ্যালবাম - মদীনা পাবলিকেশন্স

(৬) মাসায়িলে হজ্ব ও উমরাহ্ - হাফেজ, মাওলানা, মুফতী মুহাম্মদ খাইরুল্লাহ

(৭) দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম (হজ্বের অধ্যায়) - ইসলামিক ফাউন্ডেশন

(৮) কা’বার পথে (মক্কা পর্ব ও মদীনা পর্ব) -আব্দুল আজীজ আল-আমান (ভারত)

(৯) বাইতুল্লাহর মুসাফির -আবু তাহের মিছবাহ্

পবিত্র উমরাহ্, হজ্ব ও যিয়ারতের নির্দেশিকা ২৪

(১০) বাইতুল্লাহর ছায়ায় -আবু তাহের মিছবাহ্

(১১) বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ - হজ্বের অধ্যায় সমূহ

(১২) হাজ্বীদের সম্বল - হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন

(১৩) হজ্জ সহায়িকা - প্রফেসর ডঃ মোঃ আবদুল্লাহহেল বাকী

(১৪) পবিত্র যমযম - মদীনা পাবলিকেশন্স

(১৫) আল্লহ্র অতিথি - নাজমা ফেরদৌসি

(১৬) সফরে হিজায - মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদী

(১৭) হাজীদের উদ্দেশ্যে চিঠি - আধুনিক প্রকাশনী

(১৮) কাবার পথের যাত্রী - মুহাম্মদ মিকাঈল হোসেন

(১৯) মক্কার ইতিহাস - এ এন এম সিরাজুল ইসলাম

(২০) মদীনার ইতিহাস - এ এন এম সিরাজুল ইসলাম

বিঃ দ্রঃ

(১) নির্ভুল হজ্ব করার জন্য হজ্বের সকল মাসআলা-মাসায়েল জানা একান্ত জরুরী। সঠিক মাসআলা-মাসায়েল না জানলে ভুল হবেই এবং প্রতিটি ভুলের জন্য দম/কাফ্ফারা (ক্ষতি পূরণ) দিতে হবে। নতুবা আপনার হজ্ব পরিপূর্ণ হবে না। অতএব, বই পড়–ন এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি/আলেম-এর নিকট থেকে জরুরী মাসআলাগুলো বিস্তারিতভাবে জেনে/শিখে নিন এবং একটি ছোট নোট বইতে নোট করে নিন।

(২) উপরে উল্লেখিত সবগুলো বই হয়তো একজনের পক্ষে সংগ্রহ করে পড়া সম্ভব হবে না, তাছাড়া সবগুলো বই একত্রে পাওয়াও সম্ভব নয়। তাই যতগুলো বই সংগ্রহ করতে পারেন, সেগুলো পড়বেন।

হজ্বের ৮/৯ মাস পূর্ব থেকে প্রস্তুতি শুরু করলে এ বইগুলো অবশ্যই পড়া সম্ভব।

(৩) আপনাদের সুবিধার জন্য বর্তমান সংস্করণে হজ্বের জরুরী মাসআলা-মাসায়েল এ বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে/যথাস্থানে সংযোজন করা হলো, যাতে আপনাকে জরুরী মাসআলা-মাসায়েল জানার জন্য বিভিন্ন বই ঘাটতে/পড়তে না হয়। তবে মনে রাখবেন হজ্বের মাসআলার কোনো সীমা নেই, তাই বিভিন্ন হাদীসের/হজ্বের উপর লেখা বই পড়ার কোনো বিকল্পও নেই। আমার এ বই-এর পরিসরে আরও বিস্তারিতভাবে সব কিছু লেখা সম্ভব হলো না। সবকিছু লিখলে বইটি আরো অনেক বড় হয়ে যাবে। ফলে অনেকেই এই বইটি পড়তে চাইবে না। আমার উপদেশ- বই পড়ুন, বেশী বেশী পড়ুন এবং সহীহ-শুদ্ধভাবে হজ্ব করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url